রোগের বিবরণ
জন্ডিস তিন প্রকার। যথা হেমোলাইটিক জন্ডিস হেপাটোসেলুলার এবং অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস।রক্তে লোহিতকণারা বিভিন্ন কারণে ধ্বঃস হয়ে গিয়ে যে জন্ডিস হয় তাকে হিমোলাইটিস জন্ডিস যকৃত কোষের প্যারেনকাইমা কোষকলা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে জন্ডিস রোগ সৃষ্টি করলে তাকে হেপাটোসেলুলার জন্ডিস এবং পিত্তনালী অবরুদ্ধ হয়ে পিত্তরস ও পিত্তরঞ্জক ডিওডেনামে না এসে রক্তবাহতে মিশে য়ে জন্ডিস রোগে সৃষ্টি তাকে অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস বলা হয়।জন্ডিস হল চামড়া এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর নিচে পিত্তরঞ্জক জমা হয়ে রোগীর বাহ্যিক রূপকে হলুদ করে দেওয়া এবং যকৃতের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়া রক্তের লোহিতকণা ধ্বংস হওয়া প্রভৃতি।
আক্রান্ত তন্ত্র
পৌষ্টিকতন্ত্র রক্তের হৃদপিণ্ড চর্ম প্রভৃতি এই রোগের ফলে আক্রান্ত হয়।
আক্রমণের বয়স যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে।
আক্রান্ত লিঙ্গ স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়েরই এই রোগ হতে পারে।
রোগের কারণ
যকৃতের গোলযোগ অর্থাৎ স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়ার চর্বি জাতীয় খাদ্য যেমন তেল ঘি মাছ মাংস প্রভৃতি বেশি খাওয়া মাদকদ্রব্য সেবন ম্যালেরিয়া কালাজ্বর পিত্তপাথরী প্রভৃতি রোগে ভুগতে ভুগতে এই রোগের সৃষ্টি হয়। এর ফলে রক্তের লোহিত কণিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। একে বলা হয় হেমোলাইটিক জন্ডিস।
বিভিন্ন প্রকার বীজাণু সংক্রমনের বা বিষাক্ত বস্তুর প্রভাবে যকৃত কোষের প্যারেনকাইমা কোষ কলা নষ্ট হয়ে হেপাটোসেলুলার জন্ডিস হয়।
পিত্ত নিঃসরণের ব্যাঘাত জনিত কারণে হয় অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস।
রোগের লক্ষণ
১ হেমোলাইটিক জন্ডিস প্রকট লক্ষণ কিছু থাকে না। এতে Plasma Billirubin 4 mg/100 ml এর নিচে থাকে।
প্লীহা বৃদ্ধি পায়।
২ জ্বর থাকে দিন দিন জ্বর বাড়তে থাকে কোন ঔষধেই জ্বর সারতে চায় না।
৩ সকল প্রকার জন্ডিসের ক্ষেত্রেই ডান দিকের উপরে পেট ব্যাথা হয়।
৪ অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস রোগীর চোখের সাদা অংশ হাত ও পা নখ এবং মূত্র গাঢ় হলুদ বর্ণ হয়ে যায়। মলের রং মাটির ন্যায় বা সাদা হয়। মলের পরিমাণ ও বেশি হয়।
৫ খাবার খাওয়ার পরে মলত্যাগের ইচ্ছা জাগে। মলের ফ্যাট থাকে। মুখে তিক্ত আস্বাদ লাগে রোগীর সর্বদা ঘুম ঘুম ভাব লাগে।
৬ ক্ষুধা মন্দ গা বমি ভাব দুর্বলতা কোষ্ঠকাঠিন্য বা উদরাময় প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৭ হেপাটোসেলুলার জন্ডিস মূত্রের সাথে পিত্ত নির্গত হয়।
৮ চক্ষুর শ্বেত অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ক্ষুধা থাকে কিন্তু খেলে বমি আসে। যকৃত বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসা
1 (গ্লুকোন-ডি ) বা (গ্লুকোন-সি) ৪-৫ চামচ ১গ্লাস জলে গুলে দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খাওয়াতে হবে। এটি জন্ডিসের প্রধান চিকিৎসা।
যেকোনো একটি লিভারের ঔষধ বেশ কিছুদিন চালাতে হবে।।
Syrup Sorbiline (সিরাপ সরবিলিন )
২ চামচ করে দিনে ২ বার দুপুরে ও রাতে খাবার আগে খেতে হবে।
অথবা Syrup Liv 52 (লিভ ৫২ সিরাপ)
২ চামচ করে দিনে ২ বার খাবার আগে খেতে হবে।
3 যেকোনো একটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও সি মিশ্রিত ঔষধ দিতে হবে।
Cap Becosule (ক্যাপসুল বিকোসুল)
১ টি করে প্রতিদিন ১-২ বার খাবার পর খেতে হবে।
4
জ্বর খুব বেশি হতে থাকলে দিতে হবে।
Tab Parasafe (ট্যাবলেট প্যরাসেফ)
১ টি করে দিনে ২-৩ বার খাবার পর ৩-৫ দিন।
5
গা বমি ভাব বা বমি হলে দিতে হবে নিচে যে কোন একটি ঔষধ।
Tab Zemetil- 5 mg ( ট্যাবলেট জেমেটিল ৫ মিগ্ৰা)
১ টি করে দিনে ২-৩ বার খাবার আগে খেতে হবে।
6
অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের ক্ষেত্রে ওপরে চিকিৎসার সাথে নিচে যে কোন একটি ঔষধ দিতে হবে।
Cap Terramycin 250 mg ( ক্যাপসুল টেরামাইসিন ২৫০মিগ্ৰা)
১ টি করে দিনে ৪ বার খাবার পর খেতে হবে ৭ দিন।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা
রোগীকে কমপক্ষে তিন থেকে চার সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে। দিনে একবার সরু চালের ভাত পেঁপে সিদ্ধ কচি পোনা মাছ ঝোল প্রভৃতি দেওয়া যাবে। এছাড়া। বিস্কুট রুটি কমলালেবু বাতাবি বা মুসুম্বী লেবুর রস আর আখের রস কাঁচা পেঁপে কাল মেঘের পাতার রস পাকা কলা আঙ্গুর পাতলা দুধ প্রভৃতি খাওয়া ভালো। তেল ঘি মশলা ডিম পাকা মাছ মাংস ভাজা খাওয়া মাদকদ্রব্য গাঢ় দুধ ঢ্যাড়শ মাষকলাই প্রভৃতি খাওয়া নিষিদ্ধ।
